নবীজি (সা.)-কে গাছ ও পাথরের সালাম
রাসুল (সা.)-এর জীবনী পাঠ করলে তাঁর প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা সম্পর্কে জানা যায়। রাসুল (সা.)-এর প্রতি সৃষ্টিজীবের অন্যদেরও অগাধ ভালোবাসা ছিল। এমন কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো—
নবীজি (সা.)-কে গাছের সালাম নিবেদন : ইয়ালা ইবনে মুররা (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সফর করছিলাম। মাঝপথে এক জায়গায় আমরা যাত্রাবিরতি করি।
রাসুল (সা.) ঘুমিয়ে পড়লে মাটি ভেদ করে একটি গাছ বের হয়ে রাসুল (সা.)-কে ঘিরে নেয়। রাসুল (সা.) ঘুম থেকে উঠলে আমরা তাঁকে ঘটনাটি খুলে বলি। তিনি বলেন, ‘গাছটি আল্লাহর কাছে আমার প্রতি সালাম নিবেদনের অনুমতি প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাআলা তাকে অনুমতি দেন।
(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮০৩১)
নবীজি (সা.)-কে পাথরের সালাম নিবেদন : আলী (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মক্কার কোনো এক প্রান্তের উদ্দেশে বের হই। তিনি যেকোনো পাহাড় বা বৃক্ষের কাছ দিয়ে যেতেন তারা তাঁকে ‘আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলুল্লাহ’ বলে অভিবাদন জানাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬২৬)
জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মক্কায় এমন একটি পাথর আছে, যেটি আমাকে নবুয়তের আগে সালাম দিত, ওই পাথরটি আমি এখনো চিনি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৮৩৩)
নবীজি (সা.)-এর প্রতি উহুদ পাহাড়ের ভালোবাসা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও তাকে ভালোবাসি।
(তিরমিজি, হাদিস : ৪৩০১)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.) উহুদ পাহাড়ে উঠলেন। অতঃপর আবু বকর, উমর ও উসমান (রা.) তাঁর অনুসরণ করেন। পাহাড় কাঁপতে থাকলে রাসুল (সা.) একে পদাঘাত করে বলেন, ‘উহুদ, স্থির হও! তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক ও দুজন শহীদ (ওমর ও উসমান) আছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৫১)
নবীজি (সা.)-এর কাছে উটের অভিযোগ : আবু জাফর আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) বলেন, একদা রাসুল (সা.) আমাকে বাহনের ওপর তাঁর পেছনে বসালেন এবং আমাকে তিনি একটি গোপন কথা বলেন, যা আমি কাউকে বলব না। রাসুল (সা.) দূরবর্তী উঁচু জায়গা (দেয়াল ইত্যাদি) অথবা খেজুরের বাগানের আড়ালে মলমূত্র ত্যাগ করা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন।
এরপর রাসুল (সা.) এক আনসারির বাগানে প্রবেশ করেন। সেখানে একটা উট দেখতে পান। উটটা রাসুল (সা.)-কে দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। উটের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। রাসুল (সা.) উটটির কাছে এসে কুঁজে এবং কানের পেছনের অংশে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিলে উট শান্ত হয়। এরপর তিনি বলেন, ‘এই উটের মালিক কে? এই উটটা কার?’ এক আনসার যুবক এসে বলল, ‘এটা আমার, হে আল্লাহর রাসুল!’ তিনি বলেন, ‘তুমি কি এই পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? কারণ সে আমার কাছে অভিযোগ করছে যে তুমি তাকে ক্ষুধার্ত রাখো এবং (বেশি কাজ নিয়ে) ক্লান্ত করে ফেলো!’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ৬৬৩)
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, নবীজি (সা.)-এর প্রতি এই সমস্ত প্রাণী কিংবা গাছপালার সম্মান প্রদর্শন এবং সালাম নিবেদন করা আশ্চর্যের বিষয় নয়; বরং এটি রাসুল (সা.)-এর মুজিজা। এরই মাধ্যমে জড় পদার্থের মাঝে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। যেমনটি কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পাথরের মধ্যে এমনও আছে, যা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়, তার মধ্যে কিছু এমন আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয়। আবার এমন কিছু পাথর আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জ্ঞানহীন নন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৪)