শিভামের ‘কনকাশন’ বদলি কেন হার্শিত? প্রশ্নের ঝড়, বাটলারের ক্ষোভ
ঢাকা, 1 ফেব্রুয়ারি, (জাতির আলো) :
ব্যাটিং অলরাউন্ডারের বদলি হিসেবে বিস্ময়করভাবে বিশেষজ্ঞ বোলার নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় ভারতকে, পরে সেই বোলারই বড় ভূমিকা রাখেন ভারতের জয়ে, প্রশ্ন উঠছে ভারতীয় ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রিনাথের সিদ্ধান্ত নিয়ে।
ভারত-ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজের চতুর্থ ম্যাচের ঘটনা এটি। পুনেতে শুক্রবার ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা ভারতকে টেনে তোলায় বড় ভূমিকা রাখেন শিভাম। ৩৪ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি। ষষঠ উইকেটে ৪৫ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন তিনি হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে। ৩০ বলে ৫৩ করেন পান্ডিয়া।
ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হওয়া শিভামের ব্যাটিংয়ের সময় একটি বল লেগেছিল হেলমেটে। পরে আর ফিল্ডিংয়ে নামেননি ৩১ বছর বয়সী ক্রিকেটার। তার ‘কনকাশন বদলি’ হিসেবে নামেন হার্শিত।
কিন্তু ‘কনকাশন’ বদলির নিয়ম অনুযায়ী, এটা হতে হবে ‘লাইক-ফর-লাইক’ বদলি বা যতটা সম্ভব, একই ধরনের ক্রিকেটার হতে হবে। প্রশ্নটা এখানেই। হার্শিত রানা নিখাদ পেস বোলার। শিভাম বোলিং করেন বটে, তবে সেটা জেন্টল মিডিয়াম পেস। নিয়মিত বোলিংও পান না।
৩৪ ম্যাচের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তিনি ১১ বার বোলিংই পাননি। পুরো চার ওভার বোলিং করেছেন স্রেফ দুই ম্যাচে। তিন ওভার করেছেন মাত্র চার ম্যাচে। তাকে ‘অলরাউন্ডার’ বলাও কঠিন, টেনেটুনে বড়জোর ব্যাটিং অলরাউন্ডার বলা যায়।
স্কোয়াডে একই ঘরানার ক্রিকেটার একদমই না থাকলে অবশ্য কিছুটা ছাড় দেওয়া হয় ‘লাইক-ফর-লাইক’ বদলির ক্ষেত্রে। তবে এই ম্যাচে ভারতের স্কোয়াডে ছিলেন রামানদিপ সিং, যিনি শিভামের একদম যথাযথ বদলি হতে পারতেন। তিনিও মূলত ব্যাটসম্যান, দলের প্রয়োজনে শিভামের মতোই জেন্টল মিডিয়াম পেস করে থাকেন।
রাভাষ্যে থাকা সাবেক দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন ও নিক নাইট প্রশ্ন তোলেন তখনই। কথাবার্তায় যার লুকোছাপা নেই কখনোই, সেই পিটারসেন সরাসরিই বলেন, “সে (হার্শিত) তো শিভাব দুবের লাইক-ফর-লাইক বদলি হতে পারে না। বিশ্বের যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, তারা একই কথা বলবে। দুবে তো জেনুইন পেসার নয়, রানা জেনুইন পেসার।”
পিটারসেনের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি শোনা যায় নাইটের কথায়ও।
সেই বিতর্ক আরও বড় হয়ে ওঠে পরে, যখন ম্যাচে প্রবলভাবেই প্রভাব রাখেন হার্শিত। দ্বাদশ ওভারে আক্রমণে এসে দ্বিতীয় বলেই তিনি ফেরান লিয়াম লিভিংস্টোনকে। পরে তিনি ফেরান জ্যাকব বেথেলকে। শেষ নয় সেখানেই। শেষ দিকে ইংল্যান্ডের আশা জাগিয়েছিলেন যিনি, ১৫ বলে ১৯ রান করা সেই জেমি ওভারটনকেও বিদায় করেন তিনি।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরে দুটি টস্ট খেলা এই পেসার টি-টোয়েন্টি অভিষেকে তিন উইকেটের দেখা পান ৩৪ রান দিয়ে।
১৫ রানে জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ভারত।
ম্যাচের পর এটা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলতে কুণ্ঠা করেননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার।
“এটা অবশ্যই ‘লাইক-ফর-লাইক’ বদলি নয়। আমরা এটার সঙ্গে একমত নই। হয় শিভাম দুবের বলের গতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল বেড়ে গেছে অথবা হার্শিতের ব্যাটিংয়ে আচমকা অনেক উন্নতি হয়েছে। এটা ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়।”
“এসব খেলারই অংশ। আমাদের উচিত ছিল ম্যাচটি জেতা। তবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নই।”
বাটলার জানালেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি ম্যাচ রেফারি ও ভারতের সাবেক পেসার জাভাগাল শ্রিনাথ।
“আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। আমি ব্যাটিংয়ে নামার সময় এটিই ভাবছিলাম, হার্শিতকে কার বদলে নেওয়া হলো? তারা জানালেন, এটা কনকাশন বদলি। অবশ্যই সেটায় আমি দ্বিমত জানাই। এটা মোটেও ‘লাইক-ফর-লাইক’ বদলি নয়।”
“তারা জানালেন যেন, ম্যাচ রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বা এই সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়ায় ছিলাম না। তবে ব্যাপারটি পরিষ্কার হতে জাভাগালকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে আমাদের।”
ম্যাচে পরাজয়ের জন্য অবশ্য দায়টা নিজেদের কাঁধেই নিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। কিন্তু কনকাশন বদলির প্রশ্নে তার ছাড় নেই।
“যেটা আগেও বললাম, আমাদের জিততে না পারার মূল কারণ অবশ্যই এটি নয়। আমাদের সুযোগ ছিল জয়ের। আমরা তা নিতে পারতাম। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আরেকটু স্বচ্ছ ধারণা নিতে চাই।”
ভারতের বোলিং কোচ মর্নে মর্কেল বল ঠেলে দিলেন ম্যাচ-রেফারির কোর্টে। তার দাবি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটু আগেও প্রস্তুত ছিলেন না হার্শিত।
“ব্যাটিং শেষে বেরিয়ে আসার সময় শিভামের মাথাব্যথার লক্ষণ ছিল। আমরা সম্ভাব্য উপযুক্ত একজন বদলির নাম ম্যাচ রেফারির কাছে পাঠাই, এরপর সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি ম্যাচ রেফারির। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হার্শিত ডিনার করছিল। যতটা সম্ভব দ্রুত তৈরি হয়ে তাকে মাঠে নেমে বোলিং করতে হয়েছে।”
“এটা আমার ক্ষমতার বাইরে, সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ম্যাচ রেফারি। আমরা কেবল একটি নাম প্রস্তাব করতে পারি, এরপর বাকিটা আমাদের আওতার বাইরে।”
হার্শিত নিজে অবশ্য এসব বিতর্ক, কার বদলে সুযোগ পেলেন, এগুলো ভাবতেই চান না। নিজের কাজ করতে পেরেই তিনি খুশি।
“(দ্বিতীয় ইনিংসের) দ্বিতীয় ওভারে আমাকে এটা জানানো হয়। এমনিতে আমি বেশ কিছুদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, শুধু এই সিরিজের জন্যই নয়। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য এই মুহূর্তটির (অভিষেক) অপেক্ষায় ছিলাম। সুযোগটি যখন এলো, পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে ভাবিনি, স্রেফ নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ডেথ ওভারে বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা আছে আমার, আস্থা রেখেছি নিজের ওপর।”