রূপচর্চা

চর্মরোগ বাড়ে শীতকাল এলেই

বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় শীতকালে চামড়া থেকে পানি শুষে নেয় বায়ুমণ্ডল। পানি শুষে নেওয়ায় ত্বক, ঠোঁট ও পায়ের তালু ফেটে যেতে থাকে। মানবদেহের ৫৬ শতাংশই পানি। এর মধ্যে ত্বক নিজেই ধারণ করে ১০ ভাগ। ফলে ত্বক থেকে পানি বেরিয়ে গেলে ত্বক দুর্বল ও অসহায় হয়ে পড়ে। ত্বকের যেসব গ্রন্থি থেকে তেল আর পানি বের হয়ে থাকে, তা আগের মতো ঘর্ম বা তেল কোনোটাই তৈরি করতে পারে না। এতে ত্বক আরও শুকিয়ে যায়।

শীতে ত্বক ছাড়াও সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ঠোঁটের। কমবেশি সবারই ঠোঁট ফাটে। তৈলাক্ত প্রলেপ ঠোঁটে ব্যবহার করলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

এ ক্ষেত্রে ভ্যাসলিন, লিপজেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে ঠোঁট ভালো রাখা যায়। তবে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। এতে ঠোঁট ফাটা বেড়ে যেতে পারে। আরেক শ্রেণির মানুষের শীত এলেই পা ফাটার প্রবণতা বাড়ে। সে ক্ষেত্রে এক্রোফ্লেভিন দ্রবণে পা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে যাওয়ামাত্র ভ্যাসলিন মেখে দিন।

এ ছাড়াও গ্লিসারিন ও পানির দ্রবণ পায়ে মাখলে পায়ের ফাটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পায়ের ফাটা কম হলে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ব্যবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এখন বাজারে অনেক ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, যা তেল ও পানির মিশ্রণ। এতে থাকে ত্বক কোমলকারী পদার্থ। যেমনÑ পেট্রোলিয়াম, ভেজিটেবল অয়েল, ল্যানোলিন, সিলিকন, লিকুইড, প্যারাফিন, গ্লিসারিন ইত্যাদি।

শীতকালে বাড়ে ইকথায়োসিস নামক বিশেষ এক ধরনের চর্মরোগ। এটি জন্মগত একটি রোগ এবং শিশুকাল থেকেই লক্ষ করা যায়। এ রোগে প্রতিহাজারে অন্তত একজন ভুগে থাকেন। নারী-পুরুষের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সমপরিমাণ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হয়, তাদের হাত-পায়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, ত্বক ফাটা ফাটা এবং ছোট ছোট গুঁড়িগুঁড়ি মরা চামড়া বা আঁশ পায়ের সামনের অংশে বা হাতের চামড়ায় লক্ষণীয়ভাবে ফুটে ওঠে। তবে হাত-পায়ের ভাঁজযুক্ত স্থান থাকবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। শীতকাল এলে এ রোগটি বাড়ে। এ রোগে আক্রান্তদের হাত-পায়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে, হাতের রেখাগুলো খুবই স্পষ্ট এবং মোটা, যা সাধারণের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় নয়। এর সঙ্গে অ্যালার্জিক সমস্যা। এ ধরনের রোগীর কারও কারও সর্দি সর্দি ভাব থাকবে। তাদের পারিবারিক ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, পরিবারের কারও অ্যালার্জিক সমস্যা ছিল বা এখনো আছে। এ রোগটি কখনোই ভালো হয় না। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শীত এলেই বেশি করে তৈলাক্ত পদার্থ মাখলে ত্বক ভালো থাকে এবং ফাটা ভাব পরিস্ফুট হয় না। তবে যাদের ফাটা অবস্থা খুব বেশি, তাদের ক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড মাখলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। আর এটি পেতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

[ডা. দিদারুল আহসান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ৩২ গ্রিনরোড, ঢাকা]

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments