আন্তর্জাতিকজাতীয়

হাসিনা-বাইডেন আলাপ দিল্লিতে

আলোচনায় বাইডেনের তোলা সেলফি, দক্ষিণ কোরিয়া আর্জেন্টিনা আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর
নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তোলা সেলফিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ। (ডানে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা -পিএমও
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ব্যস্ত দিন পার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মর্যাদাপূর্ণ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সাইডলাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। চার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন উষ্ণ অভ্যর্থনা।
গতকাল সকালে নয়াদিল্লির ভারত মান্দাপনে আয়োজিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য গেলে অন্য বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর আমন্ত্রণেই সদস্য না হলেও অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন এ সম্মেলনে। সকালে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে দুই দফায় ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে প্রথম অধিবেশন শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একান্ত পরিবেশে কথা হয় শেখ হাসিনার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজহাতে মোবাইল নিয়ে সেলফি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যে এই হাস্যোজ্জ্বল সেলফি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

কথোপকথনের সময় শেখ হাসিনা, পুতুল ও বাইডেনের পাশেই উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। উপস্থিত একজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অত্যন্ত আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদির বাইরে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস শেয়ার করেছেন শেখ হাসিনা ও জো বাইডেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যু নিয়ে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন উচ্ছ্বসিত। পরে তাঁরা একসঙ্গে ছবি তোলেন। ক্যামেরায় নিজেদের ছবি নিজেরাই তুলতে গেলে জো বাইডেন নিজেই মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে সেলফি তোলেন শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে জো বাইডেনের সঙ্গে চমৎকার খোশগল্প হয়েছে। আমি তাঁকে সমন্বিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যালয় মনোবিজ্ঞানীর প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বের কথা বলেছি।’
রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের মাঝামাঝি সময়ে আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনকে জানাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোবাইডেনের সঙ্গে কথা বলতে চান। সঙ্গে সঙ্গে বাইডেন রাজি হন। পনেরো মিনিটের মতো আলাপ হয়। প্রধানমন্ত্রী বাইডেনকে জানান, আমার বাবা-মা, ভাই সবকিছুই দেশের জন্য হারিয়েছি। দেশটাই আমার আসল পরিবার। প্রধানমন্ত্রী বাইডেনকে বলেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অনেক কাজ করেছি। জোবাইডেন বলেন, আপনার সাফল্যের কথা জানি। এ সময় সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করার কথা বলেন। ফ্লোরিডায় কাজের অভিজ্ঞতার কথা জানালে বাইডেন সঙ্গে সঙ্গে সায়মা ওয়াজেদের হাত ধরে তার যোগাযোগের ঠিকানা জানতে চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পরে ব্লিনকেনের সঙ্গে আগামী শীতে সুবিধাজনক সময়ে সফর আয়োজনের কথা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, শুধু দুপুরেই নয়, রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত নৈশভোজে জোবাইডেনের সঙ্গে আবার আলোচনা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জোবাইডেন নিজেদের মধ্যে আন্তরিক ভাবে কুশল বিনিময় করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নৈশভোজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। সেলফি নিয়ে বিরোধী দলের সমর্থকদের সমালোচনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানুষের মানসিকতা এত যে নষ্ট হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আসলে তাদের মুখে চুনকালি পড়েছে।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একে একে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ন সুক ইয়ল ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজের। রাতে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আয়োজিত নৈশভোজ এবং জি২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ প্রতিপাদ্যের এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়া বিশ্বনেতারা হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ন সুক ইয়ল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা প্রমুখ। চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্মেলনে না এলেও তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ এসব নেতা বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু অর্থায়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), খাদ্য নিরাপত্তা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও সমাধান খুঁজে বের করতে সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেছেন। আজ দুপুরে সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে বিশ্বনেতারা সম্মত হলে ‘নয়াদিল্লি ঘোষণা’র মাধ্যমে জি২০-এর এবারের অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে। এবার ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ অনুষ্ঠিত হলো। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আজ দুপুরে সম্মেলন শেষ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার তিনি নয়াদিল্লি পৌঁছেই প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠক করেছেন।

 

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments