হৃৎপিন্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল ব্যথার উপশম
সাধারণত হৃদরোগের অসুখ বলতে আমরা হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনীর সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয় তাকে বুঝি। এ রোগ সংক্রান্ত ACC/ AHA/ AATS/ SCAI/STS/FDA এর নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করলে আমরা রোগের মূলত তিন প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি পেয়ে থাকি।
প্রথমত:
নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, যা সব রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা সর্বস্তরের চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য।
দ্বিতীয়ত:
Invasive Treatment, যেমন হৃদপিন্ডের বন্ধপ্রায় ধমনীর মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং (Stent/PCI) বসানো অথবা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি (CABG) করা। যা মূলত বিলম্ববিহীন, দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তৃতীয়ত:
কোনো প্রকার Invesive পদ্ধতি ছাড়াই হৃৎপিন্ডের রক্তনালির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনীর উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কিনা ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিন্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো US-FDA নির্দেশিত EECP পদ্ধতি, যা কিনা অত্যন্ত কার্যকরী, ও একটি নিরাপদ চিকিৎসাব্যবস্থা।
EECP এর কার্য পদ্ধতি:
হৃৎপিন্ড- Systole এর সময়ে পরিশোধিত রক্তকে নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনীর মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং Diastole এর সময় এ রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে। EECP এ Diastole এর সময় শরীরের নিচের অংশের সব ধমনীর ওপর শরীরের বাইরে অবস্থিত Cuff এর মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্তকে অপেক্ষাকৃত উচ্চচাপে দ্রুত হৃৎপিন্ডে ফেরত পাঠায়। এ কাজটি রোগীর ক্রমাগত ECG, কম্পিউটার ও কম্প্রেসারের সমন্বিত কার্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এ রক্তের তরঙ্গ হৃৎপিন্ডের করোনারি ধমনীতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে এবং যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হয় সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে বাধাকে অতিক্রম করে অক্সিজেন সংবলিত রক্ত হৃৎপিন্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। ফলে রোগীর হৃদরোগজনিত বুক ব্যথার উল্লেখযোগ্য উপশম হয়, দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আগের মতো স্বাভাবিক ও সাচ্ছন্দ্য জীবনব্যবস্থায় ফিরে আসতে পারে.
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি ও মেডিসিন
আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা।