বিনোদন

সিনেমা হলে তালি, ‘প্রিয়তমা’ চিত্রনাট্যকারের বাড়িতে শোক

প্রিয়তমা’ সিনেমার চিত্রনাট্যকার ফারুক হোসেন
প্রিয়তমা’ সিনেমার চিত্রনাট্যকার ফারুক হোসেনছবি: ফেসবুক
সিনেমা হলে ভক্তদের উচ্ছ্বাস। গল্পটি কখনো আবার দর্শকদের মন খারাপ করে দেয়। সিনেমা শেষেও গল্পটি দর্শকের মাথায় ঘুরপাক খায়। বলছি ঈদের ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার গল্পের কথা। যে সিনেমার গল্পটি সাড়া ফেলেছে। সেই সিনেমার গল্পকারের বাসায় শোক। কারণ, তাঁদের প্রিয়জন ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার ফারুক হোসেন এখন আর নেই। ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নেমে আর ফেরেননি। আট বছর ধরে নিখোঁজ তিনি!
‘প্রিয়তমা’ সিনেমা মুক্তির পর একের পর এক ফোনকল পাচ্ছেন এর গল্পকার ফারুক হোসেনের পরিবারের সদস্যরা। প্রশংসা করছেন নানান অঙ্গনের মানুষ। একটা ফোনকল আসে আর তারপর তাঁদের শ্যামলীর রিং রোডের বাসায় নেমে আসে নিস্তব্ধতা। গতকাল বুধবার ছিল ফারুকের হারিয়ে যাওয়ার দিন। ফারুককে স্মরণ করে যোগাযোগ করি তাঁর মায়ের সঙ্গে। সিনেমা আর সন্তানকে নিয়ে তিনি কথা বলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ফারুকের মা নাসরিন জালাল।
চিত্রনাট্যকার ফারুক হোসেন। ছবি: ফেসবুক
চিত্রনাট্যকার ফারুক হোসেন। ছবি: ফেসবুক
ছেলের কাজ নিয়ে মা খুব গর্ব করতেন। সিনেমা নিয়ে কথা হতো মা-ছেলের। ছেলে সিনেমার গল্প, সংলাপ লিখছেন। মায়ের খুব আশা ছিল, হলে একসঙ্গে সিনেমা দেখবেন। কিন্তু ছেলের সঙ্গে আর সিনেমা দেখার ইচ্ছা পূরণ হলো না। ফারুকের লেখা প্রথম গল্পের সিনেমা ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ যখন মুক্তি পায়, তখনই সে অজানায়। বছরের পর বছর চলে গেছে, ছেলেকে এখনো খোঁজেন মা। তিনি বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে আর কোনো দিন সিনেমা দেখা হবে না। আমার ছেলের ভাগ্যটা খারাপ। আমার ফারুক কোনো সিনেমাই দেখে যেতে পারল না।’ আর কথা বলতে পারলেন না মা, কেঁদে উঠলেন।
এর মধ্যে একদিন আরেক ছেলে উদয় জালালকে নিয়ে ‘প্রিয়তমা’ দেখেছেন নাসরিন জালাল। হলে যাওয়ার পথে সারাটা সময় বারবার চোখের পানি মুছছিলেন। স্টার সিনেপ্লেক্সে শুরু হলো সিনেমা। শুরুতেই পর্দায় চিত্রনাট্যকার ফারুকের ছবি ভেসে ওঠে। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পরিচালক। পর্দায় ছেলের বড় ছবি দেখে হু হু করে কাঁদতে থাকেন নাসরিন জালাল। সিনেমা নিয়ে ছেলের পাগলামির কথা মনে পড়ে যায়। ছবি শেষে কান্না থামে না মায়ের। কথাগুলো উদয় জালালের কাছ থেকে শোনা।
ফারুক হোসেনের ছোট ভাই উদয় জালাল বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই ভাইয়ার লেখা সিনেমাটা একাধিকবার দেখেছে। ছবিটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের। প্রতিবারই আমরা ইমোশনাল হয়ে যাই।’ জালাল আরও বলেন, ‘সিনেমাটি দেখে দর্শকের উচ্ছ্বাস আমাদের মুগ্ধ করেছে। মানুষ সিনেমাটি নিয়ে কথা বলছে। বাংলা সিনেমা নিয়ে এত রিঅ্যাকশন আগে দেখিনি। হল থেকে বের হয়ে মা ইমোশনাল হয়ে বললেন, “মানুষের এই ভালোবাসা ছেলেটা দেখে যেতে পারল না। আজ ফারুক থাকলে কত আনন্দ হতো!”’ ফারুক হোসেনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীন। তিনি অসুস্থ। বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকেন। প্রতিদিনই ছেলের লেখা সিনেমা দেখার কথা বললেও অসুস্থতার জন্য যেতে পারেন না। ইউটিউবে তিনি ছেলের লেখা নাটক ও ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ সিনেমাটি প্রায়ই দেখেন, আর কাঁদেন।
‘প্রিয়তমা’ সিনেমার কিছু অংশের শুটিং হয় কক্সবাজার। ছবি: ফেসবুক
‘প্রিয়তমা’ সিনেমার কিছু অংশের শুটিং হয় কক্সবাজার। ছবি: ফেসবুক
পরিচালক হিমেল আশরাফের সঙ্গে ফারুক হোসেনের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। চিত্রনাট্যকার ছিলেন তাঁর পরামর্শক। প্রায়ই তাঁদের আড্ডা হতো। এর ফাঁকে তিনি একদিন হিমেলকে ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার গল্পটি শোনান। সেই গল্প শুনেই পছন্দ হয় এই পরিচালকের। একসঙ্গে দিনের পর দিন গল্পটি নিয়ে বসেন। একসময় চূড়ান্ত হয় চিত্রনাট্য। কিছু প্রযোজকের কাছে গল্পটি তুলে ধরেন। কিন্তু কেউ বিনিয়োগ করতে রাজি হয়নি। তারপর গল্পটি পরে থাকে। অনেক দিন পর সেই গল্প নিয়ে কাজ শুরু হয় এ বছর।
কথা হয় পরিচালক হিমেল আশরাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল কক্সবাজারের অংশে শুটিং করা। কারণ, যেখানে শুটিং করছিলাম, সেই বিচের পাশেই ফারুক ভাই গোসল করতে নেমে স্রোতের টানে হারিয়ে যান। তাঁর কথাগুলো মনে পড়ছিল। থাকলে হয়তো আজ সমুদ্র পাড়ে একসঙ্গে থাকতে পারতাম। আমরা গল্প নিয়ে কথা বলতে পারতাম। আমার বারবার শুধু মনে হচ্ছিল, ফারুক ভাই হয়তো আমাদের শুটিং দেখছেন। একসময় এসে বলবেন, ‘‘এটা করো, ওটা করো’’!’

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments