প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রংপুরে ১৯ জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার রংপুর আদালত চত্বরে
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রংপুরে ১৯ জনকে আটক করা হয়। শুক্রবার রংপুর আদালত চত্বরেছবি: মঈনুল ইসলাম
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৪০ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার, বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরপত্রে জালিয়াতিসহ নানা কারণে গতকাল শুক্রবার পরীক্ষার আগে ও পরীক্ষা চলাকালে তাঁদের আটক করা হয়।
প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে গতকাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭।
রংপুর নগরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র ও এলাকা থেকে পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১৯ জনকে আটক করে পুলিশ। মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় ‘বিটু এক্স ডিভাইস’ ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রের উত্তর দেওয়ার চুক্তি করে জালিয়াত চক্র। পরীক্ষার আগের রাতে ও সকালে রংপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই চক্রের ১৯ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১১ জন পরীক্ষার্থী। বাকিরা শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। আটক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্র থেকে ডিভাইসসহ আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১১টি ডিভাইস, ৮০টি ফোন ও প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।
■ ৯ জেলায় আটক ১৪০। সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে ১১৮ জন।
■ আটক পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ার সময় নীলফামারীর সৈয়দপুরে তিন পরীক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরীক্ষা চলাকালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, কয়া গোলাহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
গাইবান্ধায় র্যাবের অভিযানে জব্দ করা ইলেকট্রনিক ডিভাইস
গাইবান্ধায় র্যাবের অভিযানে জব্দ করা ইলেকট্রনিক ডিভাইসছবি: প্রথম আলো
গাইবান্ধায় পরীক্ষা চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে জালিয়াত চক্রের ৫ হোতাসহ ৩৭ জনকে আটক করেছে র্যাব। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২৪টি মাস্টার কার্ড, ২০টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৭টি মুঠোফোন, স্ট্যাম্পসহ ব্যাংক চেক জব্দ করা হয়। র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, জালিয়াত চক্রটি পরীক্ষার্থীদের ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিল।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তরপত্রসহ (ওএমআর) ৯ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা-পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চগড়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। সদর থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে ছয়টি কেন্দ্র থেকে সাতজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার অভিযোগে ১০ নারী পরীক্ষার্থীসহ মোট ১৩ জনকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।
ভোলায় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬২ জনকে বিভিন্ন কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দিনাজপুরে অন্যের হয়ে পরীক্ষা ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ায় ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিভিন্ন কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শকেরা তাঁদের হাতেনাতে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এদিকে কুড়িগ্রামে জালিয়াতির অভিযোগে ১২ পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সদরের নয়জন, নাগেশ্বরীর দুজন এবং একজন রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. রুহুল আমীন।