পায়ে পানি আসে কেন? এটা কি মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে?

পায়ে পানি আসা মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণও হতে পারে। জেনে নেওয়া যাক পায়ে পানি আসার কিছু কারণ। পায়ে পানি এলে কী করবেন, সেটাও জেনে নিন।

পায়ে পানি আসার সমস্যায় ভুগতে পারেন যে কেউ। বিশেষত লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা বসে থাকলে এমনটা হয়। কারণ, সে সময় অভিকর্ষের টানে পায়ের শিরায় বেশ খানিকটা রক্ত জমা হয়। আর সেই রক্তের কিছু জলীয় অংশ পা ও গোড়ালিতে জমা হলেই এসব স্থান ফুলে যায়।

সাধারণত কিছু সময়ের জন্য পা উঁচু করে রেখে বিশ্রাম নেওয়া হলে সমস্যাটি সেরেও যায়। তবে এরপরও যদি সমস্যা রয়ে যায় কিংবা পা ফোলার সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। জেনে নেওয়া যাক পায়ে পানি আসার কিছু কারণ ও করণীয়।

আঘাত

পায়ে বা গোড়ালিতে আঘাত লাগলে পানি আসতে পারে। যেমন যেকোনো বয়সেই গোড়ালি মচকাতে পারে। গোড়ালির আঘাত যেমনই হোক, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে আজীবন ভোগার ঝুঁকি থাকে।

হৃৎপিণ্ডের বৈকল্য

সুস্থ অবস্থায় পায়ের শিরার রক্ত স্বাভাবিক নিয়মে আবার হৃৎপিণ্ডে ফেরত আসে। কিন্তু হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে গেলে পায়ের শিরার রক্তের পুরোটা আর স্বাভাবিক নিয়মে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসতে পারে না। তখন কিছুটা বাড়তি রক্ত জমা হয় শিরায়। তাই পা ফুলে যায়।

কিডনি বৈকল্য

কিডনির কার্যকারিতা যখন অনেকটা কমে যায়, তখন দেহ থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি স্বাভাবিক নিয়মে পুরোপুরি বেরিয়ে যেতে পারে না। এই বাড়তি পানিই জমা হয় পায়ে।

লিভার বৈকল্য

লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে লিভার থেকে পর্যাপ্ত অ্যালবুমিন আসে না। অ্যালবুমিন একধরনের প্রোটিন। এই প্রোটিন রক্তনালির ভেতর পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। অ্যালবুমিন কমে গেলে রক্তনালির পানি বেরিয়ে এসে জমা হয় পায়ের কোষগুচ্ছের মাঝের জায়গাগুলোতে। তখন পা ফুলে যায়।

পায়ে জীবাণু সংক্রমণ হলে সেই জায়গা ফুলে যেতে পারে। লালচে হয়ে যেতে পারে, ব্যথাও হয়। দ্রুত চিকিৎসা না করালে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে সহজেই। তাতে বাড়ে জটিলতা।

হাড়, টেন্ডন, নখের সমস্যায়

পেশির শেষ প্রান্তে থাকা শক্ত অংশই হলো টেন্ডন। টেন্ডনের প্রদাহ, জয়েন্টের প্রদাহ, হাড় ভাঙা, নখ বসে যাওয়া প্রভৃতি কারণেও পা ফুলে যেতে পারে। এসব সমস্যাকেও অবহেলা করতে নেই।

গর্ভাবস্থা ও গর্ভকালীন জটিলতা

গর্ভাবস্থায় পায়ে পানি আসতেই পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে অতিরিক্ত পানি আসা আবার জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। প্রি–একলাম্পসিয়া বা একলাম্পসিয়ার মতো মারাত্মক সমস্যায় পায়ে খুব বেশি পানি আসতে পারে। তাই অতিরিক্ত পানি জমা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও পায়ে পানি আসতে পারে। এমন একটি ওষুধ হলো উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার—অ্যামলোডিপিন।

শিরায় বা ভাল্‌ভে সমস্যা

পায়ের শিরায় প্রদাহ হলেও পায়ে পানি আসতে পারে। তা ছাড়া পায়ের শিরায় স্বাভাবিকভাবে যেসব ভাল্‌ভ থাকে, সেসবের কার্যকারিতা কমে গেলে পায়ের শিরায় কিছুটা বাড়তি রক্ত জমা হয়। এ অবস্থায়ও পা ফুলে যেতে পারে।

শিরায় জমাট রক্ত

যাঁরা নড়াচড়া করতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এই জমাট রক্তের কারণে পা ফুলে যেতে পারে।

তবে এমন সমস্যা কিন্তু সচরাচর দুই পায়ের শিরায় একসঙ্গে হয় না। কেবল একটি পা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। এটি খুব ভয়াবহ এক সমস্যা।

পায়ের এই জমাট রক্তের দলা ছুটে গিয়ে ফুসফুসের রক্তনালিতেও চলে যেতে পারে। এরপর শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। এমনকি রোগী মারাও যেতে পারেন।

করণীয়

  • পায়ে পানি আসা ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • পায়ে পানি আসাই যদি হয় একমাত্র সমস্যা, তাহলে এমন কিছু ব্যায়াম করতে পারেন, যাতে পায়ের পেশি নড়াচড়া হয়।
  • লবণ কম খাবেন।
  • একটানা দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করবেন না। বিরতি নিন। হাঁটাচলা করুন।
  • বসার সময় পায়ের নিচে ছোট একটি টুল রাখতে পারেন।
  • যাঁদের পায়ে পানি আসার প্রবণতা আছে, তাঁদের ঊরুর অংশে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে থাকে, এমন পোশাক এড়িয়ে চলা ভালো।

সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং (হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *