নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
সরকারপ্রধান বলেছেন, এবারের ব্রিকস সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল’।
নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশ তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দক্ষিণের দেশসমূহের উপর আরোপিত সিদ্ধান্ত, বিভাজনের নীতিকে না বলার এখনই সময়।
“সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।”
সব ধরনের হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার উপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দক্ষিণের দেশসমূহের উপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই।
“সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অসম নীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশসমূহকে আহ্বান জানিয়েছি।”
সফরের মূল আলোচনার বাইরে ইন্দোনেশিয়া, বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের এই সফরটা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল বাংলাদেশের জন্য।
“যখন সারাবিশ্ব স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশনের নামে নানা ঝামেলায়, সেখানে একটা নতুন দুয়ার খুলে গেছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সম্প্রসারণ করার জন্য সেটাই আমি মনে করি।”
বিপদজনক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ অপচয় না করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের জন্য পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের জন্য আহ্বান সম্মেলনে জানানো হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন শেখ হাসিনা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে যোগ দেন।
২৩ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘রাষ্ট্রীয় ভোজ’ এ যোগ দেন শেখ হাসিনা।
পরদিন ‘ব্রিকস-ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডার্স ডায়লগ (ব্রিকস- আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়লগ) এ ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’র সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা।
ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাকিন্টো নিউসি, তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর সাইমা সুল্লুহু এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট দিলমা ভানা রৌসেফের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি জোহানেসবার্গে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
২৩ অগাস্ট ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। একই দিন আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ এনভয় কনফারেন্সে’ বক্তব্য রাখেন।
সফরকালে শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনায়ও যোগ দেন। জোহানেসবার্গের হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে শনিবার সরকার প্রধানের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা আওয়ামী লীগের নেতারা দেখা করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে রোববার সকালে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।