হেলথ কর্নার

ডুবোতেলে খাবার ভাজতে হলে উচ্চ তাপমাত্রায় তেল গরম করতে হয়

ডুবোতেলে খাবার প্রস্তুত করার পর যে তেল রয়ে যায়, আবারও তা রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় অনেক বাড়িতে ও হোটেলে। তবে একবার ব্যবহৃত তেল আবার রান্নার কাজে ব্যবহার করা আদতে কতটা অস্বাস্থ্যকর?

একবার ব্যবহৃত তেল আবার রান্নার কাজে ব্যবহার করা আদতে স্বাস্থ্যকর নয়। ব্যবহৃত তেল আবার ব্যবহার করতে চাইলেও তা করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং নিয়ম মেনে। আবার তেল ফেলে দেওয়ার সময় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। চলুন, টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খানের কাছ থেকে বিষয়টা ভালো করে জেনে নিই।

ডুবোতেলে ভাজা খাবার শিশু-কিশোরেরা পছন্দ করে। মুখরোচক এসব খাবার থেকে প্রয়োজনীয় ক্যালরিও পায় তারা। কিন্তু ডুবোতেলে খাবার ভাজতে হলে উচ্চ তাপমাত্রায় তেল গরম করতে হয়। তাতে তেলের গঠনগত পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের ফলে তেল পুনরায় ব্যবহারের মতো স্বাস্থ্যকর থাকে না। পুনর্ব্যবহৃত তেলে ভাজা খাবার খেলে রক্তের খারাপ চর্বির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বাড়ে হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি। তো আপনি সয়াবিন, ক্যানোলা কিংবা সূর্যমুখী—যে তেলই ব্যবহার করুন না কেন। অবশ্য রান্নার পাত্রে তেল ঢালার আগেই পাত্রটি গরম করে নিলে তেলের এই গঠনগত পরিবর্তন হয় ধীরে। তাই সেই তেল আবার ব্যবহার করলেও এসব ঝুঁকি কম থাকে।

  • ব্যবহৃত পাত্রটি ঠান্ডা হওয়া অবধি অপেক্ষা করুন;
  • এবার পরিষ্কার কাপড়ে তেলটুকু ছেঁকে একটি কাচের বোতলে নিন;
  • বোতলটির মুখ ভালোভাবে আটকে রাখুন।
  • পুনরায় ব্যবহার
  • সংরক্ষণ তো করলেন; কিন্তু কত দিনের জন্য? আর এই তেল কী কাজেই–বা ব্যবহার করবেন?

তেল ব্যবহার করার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পুনরায় ব্যবহার করতে হবে, সেটিও সর্বোচ্চ তিন-চারবার। এক দিনের জমানো তেলের সঙ্গে নতুন করে টাটকা তেল মিশিয়ে নিলেও কিন্তু এই তেল এর বেশি আর রাখা যাবে না।

ব্যবহৃত তেলে আবার কোনো খাবার ডুবিয়ে ভাজার চাইতে কোনো তরকারি রান্না কিংবা সবজি বা ডিমভাজির মতো পদে ব্যবহার করা ভালো।

পুনরায় ব্যবহারের আগে তেলের রং এবং গন্ধ খেয়াল করুন। বড়সড় পরিবর্তন দেখলে সেই তেল আর ব্যবহার করবেন না।

ডুবোতেলে খাবার ভাজার চাইতে বিকল্প পদ্ধতিতে রান্নার আয়োজন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডুবোতেলে ভেজে খাবার রান্না না করে এমন পদ করুন, যাতে কম তেল প্রয়োজন হয়। মোমো বা ডাম্পলিংয়ের মতো পদ তৈরি করতে পারেন। ভাজা পদ করতে হলে এয়ারফ্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন। টাকা খরচ করে একবার এ যন্ত্রটি কিনতে পারলে পরে তেলের বিরাট খরচ থেকে বেঁচে যাবেন। আর স্বাস্থ্যঝুঁকি তো কমবেই।

যে তেল আর ব্যবহার করা যাবে না, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তা আপনি নিশ্চয়ই ফেলে দেবেন; কিন্তু কোথায়? রান্নাঘরের সিঙ্কে? তাহলেই কিন্তু আরেক মুশকিল! তেল আপনার সিঙ্কের নিষ্কাশন নলে আঠালো হয়ে আটকে থাকবে। কোনো সাবান বা ডিটারজেন্ট প্রয়োগ করেও তা দূর করা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। বাথরুমে ফেলেও লাভ নেই। বেশ কয়েকবার ফেলা হলে সেখানকার নলও আটকে যাবে। যেখানে–সেখানে তেল ফেললে কিন্তু পানি এবং মাটি দূষিত হয়ে পড়ে। তাই ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর একটা প্লাস্টিকের বোতলে খুব ভালোভাবে মুখ আটকে তেলটা রাখতে হবে। জমাট বাঁধার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। তাহলে এই বোতল ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে সুবিধা হবে। তেল চুইয়ে পড়ে পরিবেশ নষ্ট হবে না। তেলের পরিমাণ কম হলে অবশ্য কাগজ কিংবা রান্নাঘরের কাজের উপযোগী টিস্যুপেপার দিয়ে মুছেই ফেলে দিতে পারবেন।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments