জাতীয়

আগামী একশ’ দিন রাষ্ট্র পাহারা দিন : তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অনুরোধ জানাই, সংস্কৃতিকর্মীদেরও অনুরোধ জানাই, আগামী একশ’ দিন রাষ্ট্র পাহারা দিতে হবে, কারণ বিএনপি দেশটাকে বিশ্ববেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছে। ক্ষমতা পাহারা দিতে হবে না, ক্ষমতার পাহারাদার জনগণ কিন্তু রাষ্ট্র পাহারা দিতে হবে।’
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে এ কথা বলেন সম্প্রচারমন্ত্রী।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে দেশকে নিয়ে একটা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত বিশ্ববেনিয়াদের হাতে দেশটাকে তুলে দিতে চায়। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া নয়, কারণ তারা জানে নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভবপর নয়। আর তারা যে পানিটা ঘোলা করার চেষ্টা করছে সেখানে তারা নয়, মাছ শিকার করবে অন্যরা, সেটিও তারা জানে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা আর বিশ্ববেনিয়াদের হাতে দেশ ও দেশের সম্পদ তুলে দেওয়া। আর বিশ্ববেনিয়ারা শকুনের মতো তাকিয়ে আছে সুতরাং সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
ফিলিস্তিনের কথা উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, যে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন এলেই ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি করে, জামায়াত তো করেই, অথচ আজকে ফিলিস্তিনে পাখি শিকারের মতো মানুষ শিকার করা হচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, সে নিয়ে তাদের মুখে একটি কথা নাই। আপনারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, তারেক জিয়া নির্দেশ দেয় যে এটি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নাই, বিশ্বমোড়লরা অখুশি হতে পারে। বিশ্বমোড়লরা অখুশি হতে পারে সে জন্য যারা একটি শব্দও উচ্চারণ করে না তারা যদি সুযোগ পায় নিজেদের স্বার্থে দেশটাকেই বিক্রি করে দেবে। সুতরাং এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
‘ফখরুল সাহেবদের অনুরোধ জানাবো, আপনারা বেগম জিয়া, তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনীর সর্দার হিসেবে কাজ করবেন না, রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ করুন, দেশের স্বার্থে কাজ করুন, তাহলে দেশ উপকৃত হবে’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবকে বলবো, অতো উঁচু গলায় কথা বলবেন না। আপনি এমপি হওয়ার পরও আপনার দল আপনাকে শপথ নিতে দেয় নাই। আপনার দল এমপিদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের পদত্যাগ করিয়েছে, কোনো লাভ হয় নাই। সুতরাং আপনার দলের মূল নেতারা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া চায় না আপনারা নির্বাচনে এসে ভালো ফল করুন কিম্বা এমপি হন।’
এ সময় বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এটি আওয়ামী লীগ সরকার শেখ হাসিনার সরকার। কয়েকটা মানববন্ধন, নয়াপল্টনের সামনে বা কোথাও ২০-৩০ হাজার মানুষ জড়ো করে, সারাদেশ থেকে তাদের অগ্নিসন্ত্রাসীদের জড়ো করে কিছু গাড়িঘোড়া ভাংচুর করে, আগুন দিয়ে এ সরকার হটানো সম্ভব না। ২০১৩-১৪ সালে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। বহু গাড়ি-ঘোড়া পুড়িয়েছিলেন, শেখ হাসিনাকে হটাতে পারেননি। দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ নির্বাচন করার জন্যে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যেখানে দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করবে। আশা করবো বিএনপিও সেখানে অংশগ্রহণ করবে এবং তারা তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করবে। রাজপথে দাঁড়িয়ে সরকারকে হুংকার দিবেন না।’
এর আগে শহীদ শেখ রাসেলের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি পরম স্রষ্টার কাছে শহীদ শেখ রাসেলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের সাথে সবশেষে ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়। তখন ১৩-১৪ বছরের রমা, যিনি আজও বেঁচে আছেন, তাকে নিয়ে সিঁড়ির নিচে লুকিয়েছিল। সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বঙ্গমাতার লাশের কাছে নিয়ে গিয়ে শেখ রাসেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ খুনিরা বঙ্গবন্ধুর ছায়াকেও ভয় পেতো।’
‘শেখ রাসেল যদি বেঁচে থাকতেন আজকে জাতীয় জীবনে অনেক কিছু দিতে পারতেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধুকন্যার সহযাত্রী হতে পারতেন, কিন্তু খুনিরা তাকেও রেহাই দেয়নি’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কারবালার প্রান্তরে যখন ইমাম হোসেনকে জবাই করে হত্যা করা হয় তখন নারী ও শিশুদের সেই হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নারী ও শিশু নির্বিচারে এমন কি অন্তসত্ত্বা মাকেও হত্যা করা হয়েছিলো। এটি মানব ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। শুধু হত্যাকারিদের বিচার যথেষ্ট নয়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জিয়াউর রহমানসহ কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচিত হয়নি। সেই মুখোশ উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি কণ্ঠশিল্পী মো. রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ড. অরূপ রতন চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট নেতা কণ্ঠশিল্পী এসডি রুবেল, সাংবাদিক রেদোয়ান খন্দকার, মুহাম্মদ রোকন উদ্দিন পাঠান, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এইচ এম মেহেদী হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments