দেশগ্রামনগর জীবন

নোয়াবের বক্তব্য শুনবেন আপিল বিভাগ সাংবাদিকদের আয়কর বিষয়ে

ঢাকা, ৩০ জুন, ২০২৪ (জাতির আলো) : সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিক পক্ষ দেবেন এই সংক্রান্ত হাইকোর্ট রায়ের বিষয়ে আনা লিভ টু আপিলে নিউজ পেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) বক্তব্য শুনবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আনা পৃথক লিভ টু আপিল শুনানিতে নোয়াবের বক্তব্য শুনবেন বলে আজ আদালতে বলেন। আগামীকাল এই বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. সালাহউদ্দিন দোলন। তিনি শুনানিতে বলেন, সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিক পক্ষ এযাবৎ কাল দিয়ে এসেছেন।
সর্বশেষ নবম ওয়াজবোর্ডও এটি প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিকপক্ষ দেবেন এই সুপারিশ করেছেন। নবম ওয়েজ বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায় মন্ত্রিসভার একটি সাব কমিটি এটি সংবাদপত্র সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের দেয়ার সুপারিশ করেন। এই সুপারিশের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সুপারিশ বাতিল করে রায় দেন। বিষয়টি নিয়ে এর আগে আপিল বিভাগের রায় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোন কারণ নেই বলে দাবী করেন তিনি। ব্যারিস্টার ড. সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, সাংবাদিকদের আয়কর সাংবাদিকরাই প্রদান করে থাকেন। প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধার অনুকূলে সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের যে আয়কর হয় তা প্রান্তিক সুবিধা বা প্রিঞ্জ বেনেফিট হিসেবে প্রদান করেন মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ।এটি অষ্টম ওয়েজবোর্ড পর্যন্ত বহাল ছিল। নবম ওয়েজবোর্ডও তা বহাল রেখে সুপারিশ করে।
রিট আবেদনের পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট ড. কাজী আকতার হামিদ শুনানিতে বলেন, সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা করেই নবম ওয়েজ বোর্ড সুপারিশ করেছেন। সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিকপক্ষ দিবেন এর পক্ষে তিনি আইনি রেফারেন্স উল্লেখ করেন।
রিটের পক্ষে আরো ছিলেন এডভোকেট এস.এম মাহিদুল ইসলাম সজিব, এডভোকেট তোফায়েল আহমদ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। তারা শুনানিতে আয়করের বিষয়টি নিয়ে মালিক পক্ষ নোয়াবের বক্তব্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
গত বছরের ২৪ জুলাই সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নবম ওয়েজবোর্ডে গ্র্যাচুইটি ও আয়কর সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত না করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন। সেদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান। রিট পিটিশনার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট ড. কাজী আকতার হামিদ।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিষ্টার সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের আয়কর ও আনুতোষিক সংক্রান্ত দুটি সুপারিশের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। ফলে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর আগের মতোই মালিক বা কর্তৃপক্ষকেই পরিশোধ করতে হবে। পরে হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষে পৃথক আবেদন দাখিল করা হয়।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বেতনের অনুকূলে যে আয়কর হয় তা মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে সবসময় পেয়ে এসেছেন। আর বছরে মূল বেতনের সমান দুটি আনুতোষিক বা গ্র্যাচুইটি পাবেন বাসস’র সাংবাদিক-কর্মচারীরা, এটি বাসস আইনেও নিশ্চিত রয়েছে। তাছাড়া প্রাপ্ত সুবিধা নিয়ে শ্রম আইনের ১৪৯(২) ধারায় নিশ্চায়তা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। এই বোর্ড অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শের পর ‘নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ’ চূড়ান্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করে সরকার।
সে প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা আছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে।’ একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীরা প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সম পরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’ অথচ প্রজ্ঞাপনে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকরণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক, কর্মচারীদের নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন। নবম ওয়েজবোর্ডের মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান। তখন রিটটির প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৫ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন। রুলে আয়কর ও গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্যসচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর সুপারিশ দু’টিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments